এটা সর্বজনীন স্বীকৃত যে উদ্ভিদের বেঁচে থাকা এবং জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে ১৭ টি পুষ্টি উপদান অবশ্যই প্রয়োজন। এদের প্রয়োজনীয়তা এমন যে, যেকোন একটি উপাদানের অনুপস্থিতিতে উদ্ভিদের জীবনচক্র অসম্পন্ন থেকে যাবে এবং এদের করোরই বিকল্প পুষ্টি উপাদান নেই। এসকল পুষ্টি উপাদান হলোঃ কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম , ম্যাগনেসিয়াম, সালফার, আয়রণ, ম্যাঙ্গানিজ, জিঙ্ক, কপার, মলিবডেনাম, বোরণ, ক্লোরিন ও কোবাল্ট। এছাড়া অনেক গবেষক অন্যান্য উপাদানের প্রয়োজনীয়তা
সম্পর্কে বলেছেন। যেমনঃ সেলেনিয়াম, নিকেল।
কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন ব্যতিত অন্যান্য ১৪ টি উপাদান গাছ মাটি হতে সংগ্রহ করে থাকে এবং এই ১৪ টি উপাদান কে বলা হয় খনিজ পুষ্টি (Mineral Nutrients)। গাছ কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে বাতাস এবং পানি হতে।
মাটিতে অনবরত ফসল উৎপাদনের দরুন যখন এসকল পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দেয়, তখন ফসল উৎপাদনমাত্রা ঠিক রাখার জন্য বাইরে থেকে পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করতে হয়। যেসকল জৈব ও অজৈব পদার্থ মাটির উর্বরতা, গাছের বৃদ্ধি ও পুষ্টি সাধনের জন্য ব্যবহার করা হয় তাই সার।
উল্লেখ্য উদ্ভিদের পুষ্টিসাধনের জন্য এ সকল অত্যাবশ্যকীয় উপাদানের মধ্যে কিছু উপাদান বেশি পরিমান প্রয়োজন, কিছু উপাদান সামান্য পরিমান। মাটি পরীক্ষা করে ফসলের জাতের সাপেক্ষে কোন উপদানের ঘাটতি পূরণে বাইরে থেকে কী পরিমান সার প্রয়োগ প্রয়োজন তা পরিমাপ করা যায়। যাকে অামরা সুষম সার প্রয়োগ বলতে পারি। সুষম সার ব্যবহার না করলে তা নানাধরনের ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কম ব্যবহারেঃ
১। ফসল কম ফলবে
২। খাদ্য নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে
৩। দারিদ্রের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে
বেশি ব্যবহারেঃ
১। গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক ভূমিকা রাখবে
২। মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ হবে
৩। মানুষের স্বাস্থ্যহানি ঘটবে
অসম ব্যবহারেঃ
১। পুষ্টির সাম্যতা নষ্ট হবে
২। অর্থনীতির উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে
৩। মাটি, পানি ও বায়ু দূষণ হবে
সর্বোপরি কৃষকের খরচ বাড়লেও ফসলের ফলন কম হয়; অধিকিন্তু, ফসলের গুণগত মানও সঠিক থাকে না।
বাংলাদেশে সারের ব্যবহার একেবারেই সুষম নয়। বিশেষ করে ফসফরাস, পটাশ, সালফারের ব্যবহারে।
নাইট্রোজেন(ইউরিয়া) ব্যবহারে উদ্ভিদের বৃদ্ধি দ্রুত হয়, যা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় ফলে এর ব্যবহার বেশি।কিন্তু অন্যান্য উপদানঃ- ফসফরাস, সালফার, পটাশ, জিংক ইত্যাদির পরিমাণ প্রায় শূণ্যের কাছাকাছি চলে যাচ্ছে। যার কারণে, পরবর্তীতে নাইট্রোজেন প্রয়োগে ফসল বৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত হয় না। উদ্ভিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, ফসলে দানা পুষ্ট হচ্ছে না, শীত-খরায় সহনশীলতা কমে যাচ্ছে। ফসলের গুনগত মান ও পরিমাণ দুটোই কমে যাচ্ছে।
কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় দক্ষিণ এশিয়ার সফলতম দেশ বাংলাদেশ। টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে অামাদের সুষম সারের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে সকল অংশীজন- সরকার ও নীতি নির্ধারক, সার কারখানা, পুষ্টি পুনঃব্যবহার কারখানা, কৃষি সম্প্রসারণ, সার ও মৃত্তিকা পরীক্ষাগার, গবেষক ও শিক্ষক, সার বিক্রেতা, কৃষক ও সাধারণ মানুষ যারা সার ব্যবহার করে সবারই নিজস্ব ভূমিকা ও গুরুত্ব রয়েছে। সবাই মিলেই সারের গুণাগুণ, নিরাপত্তা, নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করে সুষম সারের ব্যবহারে মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো সম্ভব। সার নির্ভর ব্যবস্থাপনায় সুষম সার সকল কার্যক্রমের মুখ্য।
সৈয়দ আলিম আল রাজীর
বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা